একটি ওয়েবসাইট হতে পারে স্মার্ট বাংলাদেশের সূচক

আমরা সবাই জানি – মানুষ মরণশীল। আবার এও জানি, নশ্বর দেহের বিনাশ অবশ্যম্ভাবী হলেও কৃতির মাধ্যমে কেউ কেউ অমরত্ব লাভ করতে পারেন; পারেন মানুষের হৃদয়ের স্থান দখল করে নিজের নামকে মহাকালবধি বয়ে নিতে । আমি বিশ্বাস করি, প্রতিটি মানুষেরই কোননা কোন কর্ম জগতকে সমৃদ্ধ করে। আর সেই মহৎ কর্মের অনুসরণে হাজারো মানুষ খুঁজে পায় নতুন পথের দিশা। বহুকাল পূর্ব হতেই ব্যক্তিত্ববান মানুষের কর্মময় জীবনের ঘটনা প্রবাহ লিপিবদ্ধকরণের মাধ্যমে তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণের পাশাপাশি তাকে বাঁচিয়ে রাখার প্রক্রিয়া চলমান। তবে অধুনা এই কাজটি করতে পারে কোন ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি ওয়েবসাইট। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী নিজ প্রতিষ্ঠান অথবা নিজ কার্য সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ ও প্রচারের সুযোগ রয়েছে। বৈশ্বিক অন্তর্জালিক ব্যবস্থায় ব্যক্তির সৃজনশীলতা প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হলো ওয়েবসাইট। এছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ ও স্মার্ট বাংলাদেশ এর অন্যতম সূচক হতে পারে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থাকা বা না থাকা।

শুরুতেই জেনে নেই ওয়েবসাইট কী বা কাকে বলে?

ওয়েবসাইট হলো কম্পিউটারে সংরক্ষিত এমন তথ্যের সমষ্টি বা ভাণ্ডার যা কিনা ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে আমাদের কম্পিউটার বা মোবাইলে দেখতে বা ব্যবহার করতে পারি। আর যে কম্পিউটারে সেই তথ্য সংরক্ষিত থাকে তাকে বলা হয় সার্ভার কম্পিউটার বা ওয়েব সার্ভার। তথ্য বলতে এখানে লেখা, ছবি বা ইমেজ, অডিও, ভিডিও, এ্যানিমেশন ইত্যাদি বুঝায়।

ওয়েবসাইটের ধরন বা প্রকারভেদ:

ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কী ধরনের কাজ করে বা সেবা প্রদান করে তার উপর ভিত্তি করে যেমন বিভিন্ন ধরনের ওয়বেসাইট করা হয়, তেমনি ব্যবহারকারীদের চাহিদার উপর ভিত্তি করেও বিভিন্ন ধরনের ওয়বেসাইট তৈরি করা হয়। যেমন: ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট, ই-কমার্স ওয়েবসাইট, স্কুল/কলেজ/মাদ্রাসা/বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট, জব পোর্টাল, প্রতিষ্ঠানের পরিচিতিমূলক ওয়েবসাইট, ধর্মীয় ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ওয়েবসাইট, বিনোদনমূলক ওয়েবসাইট, গবেষণাপত্র/থিসিস প্রকাশের ওয়েবসাইট, ব্লগ লিখন ওয়েবসাইট, টিউটোরিয়াল ওয়েবসাইট, ই-মেডিসিন/চিকিৎসা বিষয়ক ওয়েবসাইট, সংগীতের ওয়েবসাইট, খেলাধুলার ওয়েবসাইট ইত্যাদি।

বস্তুত ওয়েবসাইট কেমন ধরনের হবে তার কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। নিত্য নতুন ওয়েবসাইট তৈরি হচ্ছে আর এর পরিধি বা প্রকার বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে কোন ব্যক্তি তার ইচ্ছানুসারে যে কোন বিষয় নিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন।

ওয়েবসাইটের প্রয়োনীয়তার ক্ষেত্র:

যে কোন ব্যক্তির নিজস্ব চিন্তা ভাবনার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর এবং তার সৃজনশীল কর্মের প্রকাশ ও প্রচারে  ওয়েবসাইট একটি চমৎকার মাধ্যম। মুহুর্তের মধ্যে অগণিত মানুষকে জানানো বা দেখানোর অন্যতম প্রধান বাহন হলো ওয়েবসাইট। যে কেউ তার ব্যক্তি জীবন ও কর্ম জীবনের নানাবিধ কর্মকাণ্ডের বর্ণনা, ছবি, ভিডিও, পরিকল্পনা এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি ধারাবাহিকভাবে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশের দ্বারা তার কাজের সচিত্র প্রতিবেদনসহ স্বচ্ছতা জনসম্মুখে উপস্থাপন করার সুযোগ পান।

অনুরূপভাবে, কোন প্রতিষ্ঠান তার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম গ্রাহক বা সেবা প্রত্যাশীদের সামনে তুলে ধরতে পারে। জনবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, দরখাস্ত আহবান, প্রবেশপত্র প্রদান, ফলাফল প্রকাশসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার, পণ্য সম্পর্কে আপডেট তথ্য বা নতুন পণ্যের তথ্য প্রদান, গ্রাহকদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সহজেই সম্ভব।

ওয়েবসাইট থাকার সুবিধা:

এক জন ব্যক্তি বা একটি প্রতিষ্ঠানের একটি বা একাধিক ওয়েবসাইট থাকার সুবিধা আসলে বর্ণনাতীত। ওয়েবসাইট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আধুনিকতার পরিচয় বহন করে, জনমনে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায়। ওয়েবসাইট দিন-রাত ২৪ঘণ্টা খোলা থাকে, ফলে সেবা প্রত্যাশী বা গ্রাহক তার সুবিধামত সময়ে সেবা গ্রহণ করতে পারে, এজন্য ওয়েবসাইটধারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে রাত জাগতে হয় না বা কোন কর্মী নিয়োগ করতে হয় না। পৃথীবির যে কোন প্রান্তে বসে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে যে কেউ ওয়েবসাইট দেখতে পারে। বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য ওয়েবসাইট একটি সাশ্রয়ী মাধ্যম, এটি খুব অল্প খরচে এবং দ্রুত সময়ে অধিক মানুষের কাছে পণ্য বা সেবা ও সেবার তথ্য পৌছে দিতে সক্ষম। এতে কাস্টমারের সংখ্যা বাড়ে, প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়। প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি ও ব্যক্তিত্ব বিকাশে ওয়েবসাইট অতুলনীয় মাধ্যম।

আয়ের উৎস ওয়েবসাইট:

বর্তমানে অনলাইনে আয়ের কথা অনেকেই চিন্তা করেন। অনলাইনে আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস হতে পারে আপনার নিয়ন্ত্রিত একটি ওয়েবসাইট। আপনার ওয়েবসাইটে আসা ভিজিটরের উপর ভিত্তিকরে গুগল এ্যাডসেন্স, এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ডিজিটাল পণ্য বিক্রয়, ই-কমার্স, ড্রপশিপিং, স্পন্সর ইত্যাদি নানাবিধ উপায়ে যথেষ্ঠ পরিমাণ অর্থ উপার্জন করার সুযোগ রয়েছে। যে কোন পেশার মানুষের জন্য নিজস্ব ওয়েবসাইট তার কর্ম পরিধি বৃদ্ধির পাশাপাশি হয়ে উঠবে বাড়তি আয়ের নির্ভরযোগ্য উৎস।  

একটি ওয়েবসাইট তৈরীতে যা যা দরকার:

একটি ওয়েবসাইটের প্রয়োজনীয়তা, সুবিধা এবং আয়ের বিষয়ে জেনে আপনি নিশ্চই ভাবছেন, আপনার ব্যক্তিগত বা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরি করবেন। তাহলে কিভাবে ওয়েবসাইট তৈরি করবেন সেটা জানা জরুরী।

আপনি গুগল বা ইউটিউব ঘেঁটে ওয়েবসাইট তৈরী করা শিখে নিয়ে নিজেই একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন। বর্তমানে ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে বেশিরভাগ ওয়েবসাইট ডিজাইন করা হয়। একটি অনন্য/ইউনিক ডোমেন নাম নির্ধারণ করে দেশী-বিদেশি যে কোন একটি প্রসিদ্ধ হোস্টিং কম্পানি থেকে হোস্টিং নিয়ে ডোমেইন ও হোস্টিং সংযুক্ত করার পর একটি ওয়ার্ডপ্রেস থিম ইনস্টল করে তা এডিট করে এবং প্রয়োজনীয় প্লাগিনস ব্যবহার করে নিজের ইচ্ছে মতো ওয়েবসাইট তৈরী করা যায়।

অথবা ওয়েবসাইট তৈরী করে দেয় এমন অভিজ্ঞ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের স্মরণাপন্ন হয়ে তাদের প্রদত্ত প্যাকেজ অনুসারে ফি দিয়ে আপনার ওয়েবসাইটটি তৈরি করে নিতে পারেন।

নিজস্ব ওয়েবসাইট ব্যবহারে সতর্কতা:

একটি ওয়েবসাইট আপনার জন্য যেমন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও উপকারী অনলাইন প্লাটফর্ম তেমনি এর ব্যবহারে কিছু নিয়ম-নীতি অনুসরণ না করলে হতে পারে বিপদের কারণ। ওয়েবসাইটে কারো ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত লাগে বা কোন জাতির প্রতি বিদ্বেষমূলক কোন লেখা, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি প্রচার করা থেকে বিরত থাকা উচিত। প্লাগরিজম না করে নিজস্বতা প্রকাশ ওয়েবসাইট পরিচালনার অন্যতম মূল নীতি।

এছাড়া ওয়েবসাইটটি মোবাইল রেসপন্সিভ হওয়া বাঞ্ছনীয়। হোম পেইজ অবশ্যই দেখতে আকর্ষণীয় হওয়া দরকার। ওয়েবসাইটে ব্যবহৃত থিম ও থিম এর ভার্সন, প্লাগিনস ইত্যাদি নিয়মিত আপডেট করা আবশ্যক, নইলে ওয়েবসাইট স্লো হবার আশংকা থাকে।

একটি ওয়েবসাইট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করে। উন্নত কাস্টমার সার্ভিস প্রদানের সাথেসাথে ব্যবসায়িক সফলতা তরান্বিত করতে এই সময়ে ওয়েবসাইটের বিকল্প নেই। স্মার্ট বাংলাদেশে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি প্রত্যেক নাগরিকের ওয়েবসাইট থাকা এখন সময়ের দাবি। অতএব সিদ্ধান্ত নিন এবং নিজরে ওয়েবসাইট তৈরি করুন।

ধন্যবাদান্তে-
সুনির্মল দেউরী

জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উদযাপনের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম-কানুন

প্রিয় পাঠক, শুভেচ্ছা নিবেন। ৪৫তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষ্যে নির্দেশনা প্রদান করেছেন…

Read More

8 Comments

  1. দারুণ লিখেছেন। শুভকামনা রইল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *